
কাওয়াবাতা ইয়াসুনারির উপন্যাস তুষারের দেশ প্রসঙ্গে
- 14 June, 2025
- লেখক: সৌভিক ঘোষাল
'ইকিগুনি' বা 'তুষারের দেশ' ইয়াসুনারি কাওয়াবাতার লেখা প্রথম এবং অধিকাংশ পাঠক সমালোচকের মতে তাঁর লেখা শ্রেষ্ঠ উপন্যাস। ১৯৩৪ সালের বসন্তে কাওয়াবাতা ইউকাওয়া উষ্ণ প্রস্রবণে বেড়াতে যান। এই ভ্রমণ তাঁর কাছে এতই উপভোগ্য হয়ে ওঠে যে সেই একই বছরে শরৎকালে আবার তিনি সেখানে যান, এবং সে সময়েই এই উপন্যাসটি লেখা শুরু করেন। উপন্যাসটির প্রথম অধ্যায় ১৯৩৫ সালের নভেম্বরে একটি পত্রিকায় ছাপা হয় এবং পরবর্তী অধ্যায়গুলো কাওয়াবাতা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ১৯৩৭ সালের মে মাস পর্যন্ত প্রকাশ করতে থাকেন। ১৯৩৫ থেকে ১৯৩৭ এ অনেকগুলি অধ্যায় এখানে ওখানে প্রকাশিত হবার পর যখন কিছুদিন আর কিছু প্রকাশিত হল না, তখন অনেকেই মনে করেছিলেন বইটি লেখা সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বিরতি ভেঙে ১৯৩৯ ও ১৯৪০ সালে কাওয়াবাতা আবার কিছু নতুন অধ্যায় যোগ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্ত হবার দু বছর পর ১৯৪৭ সালে এই উপন্যাসটির শেষ অধ্যায় লেখেন কাওয়াবাতা এবং পরের বছর ১৯৪৮ সালে এটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। কাওয়াবাতার তথা জাপানী সাহিত্যেরই অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস হিসেবে বিবেচিত হয় যে রচনা, স্বয়ং লেখকই যে তার সম্পর্কে ভেবেছিলেন, একক উপন্যাস হিসেবে না পড়ে এর প্রতিটি অধ্যায় আলাদাভাবেও পড়া যেতে পারে, এই তথ্য আমাদের বিস্মিত করে। দেড় দশক ব্যাপী বিচ্ছিন্নভাবে লিখিত ও প্রকাশিত ‘স্নো কান্ট্রি’ একক বই হিসেবে প্রকাশের পর সমালোচকদের বিপুল প্রশংসা অর্জন করে এবং বেশ ভাল বিক্রি হয়। বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য ছোটগল্প লিখলেও তখনো পর্যন্ত কাওয়াবাতা মূলত তাঁর সমালোচনামূলক প্রবন্ধগুলোর জন্যই বেশি পরিচিত ছিলেন, কিন্তু এই উপন্যাসটি লেখার পর তিনি জাপানী সাহিত্যে একজন গুরুত্বপূর্ণ ঔপন্যাসিক হিসেবেও সুপ্রতিষ্ঠিত হলেন।
উপন্যাসটিতে একটা কাহিনী অংশ আছে, যদিও তা এই রচনার মূল আকর্ষণ নয়। বস্তুতপক্ষে এই উপন্যাস কাহিনীভিত্তিক কোনও রচনাই নয়। আমরা উপন্যাসের শুরুতে টোকিও শহরের বুদ্ধিজীবী লেখক গবেষক শিমামুরাকে একটি ট্রেনে চড়ে আসতে দেখি জাপানের মূল দ্বীপের পশ্চিম প্রান্তের এক অঞ্চলে, যা বছরের বেশ কয়েক মাস বরফে ঢাকা থাকে৷ এখানে রয়েছে একটি উষ্ণ প্রস্রবণ। আগেও শিমামুরা একবার এই অঞ্চলে এসেছিলেন। তখন এখানকার এক নারী, কোমাকোর সঙ্গে তার একটি সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দ্বিতীয়বার এই অঞ্চলে আবার ভ্রমণ খানিকটা এই নারীর কাছেই শিমামুরার ফেরৎ আসা।
তবে আসার পথে ট্রেনে আর এক সদ্য কৈশোর পেরনো নারীর প্রতি আকৃষ্ট হন শিমামুরা। তার নাম ইয়োকো। উপন্যাসে আমরা পাই এক শীতল দিনকালের প্রেক্ষাপট৷ শিমামুরা চরিত্রটিও খানিক শীতল। অন্তত উপন্যাস জুড়ে কোমাকোর যে ধরনের আবেগ উত্তাপ আমরা দেখি, তার তুলনায় তার প্রেমিককে অনেক শীতল মানুষ বলেই আমাদের মনে হয়। মাঝে মাঝে আবেগদীপ্ত শিমামুরাকে আমরা যে একেবারেই পাই না, তা নয়। তবে তা তুলনায় সংক্ষিপ্ত ও সংযত। অবশ্য খানিক শীতল হলেও সে উদাসীন নয়। শিমামুরার রয়েছে এক নিবিড় দৃষ্টি, যা উপন্যাসের একদম শুরুতে ট্রেনের জানলার আরশি দিয়ে ইয়োকোকে পর্যবেক্ষণ সূত্রে আমরা জানতে পারি। এই পর্যবেক্ষণ বর্ণনাটি কাওয়াবাতার উপন্যাসকৃষ্টির অসামান্যতারও পরিচয়বাহী।
কাওয়াবাতা এই উপন্যাসে চরিত্রদের সম্পর্কে বর্ণনা দেন কম, তাঁদের মেলে ধরেন বেশি৷ একারণেই আমরা শিমামুরার টোকিও জীবন সম্পর্কে অল্পবিস্তর খবর পাই মাত্র, কিন্তু তাঁকে বুঝতে হয় এই উষ্ণ প্রস্রবণের হোটেলবাস পর্বটি দিয়েই। শিমামুরা টোকিওর স্থায়ী অধিবাসী আর কোমাকোও একসময়ে গেইশা হিসেবে কাজ করতে টোকিওতে কিছুদিন থাকতে বাধ্য হয়েছিল। তবে সেখান থেকে সে ফিরে আসে তার সঙ্গীত শিক্ষয়িত্রীর সঙ্গে৷ উপন্যাসের আর এক চরিত্র ইয়োকো শেষদিকে টোকিও যাবার ইচ্ছে প্রকাশ করে শিমামুরার কাছে৷ তিনটি চরিত্রের অবস্থানে বা ভাবনায় থাকলেও জাপানের অতি জনবহুল রাজধানী শহরকে পাঠকের চোখের সামনে হাজির করতে কাওয়াবাতা খুব একটা আগ্রহী হন নি এখানে। উষ্ণ প্রস্রবণের ঠান্ডা শীতল ছোট্ট জনপদের মধ্যেই রেখে দিয়েছেন উপন্যাস ও তার চরিত্রদের।
এই উষ্ণ প্রস্রবণের শীতল আবহাওয়ার সঙ্গে ইয়োকোর মিল রয়েছে অনেকটাই। সে এক আলোছায়ায় ঢাকা সদ্য কৈশোর পেরনো নারী, যার মনের কিছুটা আমরা জানতে পারি, কিন্তু অনেকটাই থেকে যায় অগোচরে। সে সুকন্ঠী, কিন্তু চানঘরের বাইরে কারো সামনে তাকে কখনো গাইতে দেখা যায় না। সে সঙ্গীত শিক্ষয়িত্রীর ছেলের সেবা শুশ্রুষা করে, কিন্তু তার প্রেমাসক্ত ছিল কীনা তা স্পষ্ট হয় না। তার অকাল মৃত্যুর পর ইয়োকো প্রায়ই তার কবরের কাছে যায়। এ কী ভালোবাসার টান না সাধারণ হৃদয়বৃত্তি, তা নিশ্চিতভাবে অনুমান করার কোনও হদিশ উপন্যাসে নেই। অন্যদিকে কোমাকো শিমামুরার জিজ্ঞাসার জবাবে স্পষ্টই জানিয়েছে ইয়োকিও নামের এই ছেলেটির সঙ্গে তার নাম জড়ালেও তারা কখনোই কোনও সম্পর্কে কখনো আবদ্ধ ছিল না। সঙ্গীত শিক্ষয়িত্রীর কাছে শিক্ষানবিশী পর্বে শিক্ষিকার এই ছেলের সঙ্গে তার পরিচয় ছিল, তাদের সম্পর্ক হোক এমন একটা বাসনা তার শিক্ষিকারও মনে মনে ছিল, কিন্তু সে সব জল্পনার কোনও কিছুই বাস্তবে পরিণত হয় নি। শিমামুরাকে বিদায় দিতে কোমাকো যখন রেল স্টেশনে আসে, তখন ইয়োকিওর আসন্ন মৃত্যুযাত্রার খবর সহ তাকে ডাকতে আসে ইয়োকো। কোমাকো এই চরম মুহূর্তেও যেভাবে ফিরতে অস্বীকার করে, তা সবাইকেই খানিকটা অবাক করে দেয়।
ইয়োকোর বিপরীতে কোমাকো অনেকটাই স্পষ্ট। তার আবেগের উচ্চারণ স্পষ্ট, আবেগ গোপন করার চেষ্টাগুলিও ছায়াময় নয়। শিমামুরার প্রথম ভ্রমণ উপন্যাসকালের আগের ঘটনা। সেখানে শিমামুরা কোমাকোর প্রেমের সূত্রপাতের খবরটি কেবল আমরা জানি, কিন্তু আর বিশেষ কিছু জানি না। এর প্রায় ছয় মাস বাদে শিমামুরার দ্বিতীয় ভ্রমণের সময় কোমাকো প্রাথমিক জড়তা ঝেড়ে ফেলে দ্রুতই শিমামুরাকে আলিঙ্গনাবদ্ধ করে, তার কন্ঠলগ্ন হয়। তার আদুরে প্রেমিকা চরিত্রটি বেশ মধুর কিছু দৃশ্যে কাওয়াবাতা উপস্থাপিত করেন। জাপানী ঐতিহ্যের হাইকুর মতো ছোট আয়তনের কবিতার কথা কাওয়াবাতার আখ্যানশৈলি প্রসঙ্গে কেউ কেউ স্মরণে আনেন। কোমাকোর হৃদয় মেলে দেবার টুকরো মুহূর্তগুলি এর প্রমাণ হিসেবে হাজির করা সম্ভব। শিমামুরার তৃতীয়বার ভ্রমণের সময় দেখা যায় এই দুই যুগলের খবর আশেপাশের সবাই জানে। কোমাকোর কুন্ঠাহীন অভিব্যক্তিই এর কারণ।
কোমাকোর শিমামুরার প্রতি আবেগ ও কাছে আসা যেমন আছে, তেমনি আছে অভিমান ও মাঝে মাঝে সে কারণে নিজেকে দূরে নিয়ে যাবার চেষ্টাও। গান বাজনায় অসম্ভব পারদর্শী এই গেইশা মেয়েটি অভিমান ও একাকীত্ব থেকে মাঝে মাঝেই নেশায় ডুবে যায়, পার্টিতে মত্ত হয়ে ওঠে। শিমামুরার চলে যাওয়া ও দীর্ঘ অদর্শন থেকে কখনো অভিমান জন্ম নিয়েছে কোমাকোর, তবে তার গাঢ়তর ও গভীরতর ঘটনাটি ঘটে যখন শিমামুরা তাকে একবার খানিক অচেতনেই 'ভালো মেয়েমানুষ' বলে অভিহিত করে। জাপানী ভাষায় 'ভালো মেয়ে' ও 'ভালো মেয়েমানুষ' এর পার্থক্যকে কীভাবে অভিব্যক্ত করেছেন কাওয়াবাতা তা আমাদের জানা নেই, তবে বোঝা যায় বাংলায় এই দুইয়ের এর মধ্যে যে ব্যবধান, তেমন কিছুই মূলে থেকে থাকবে। প্রেমিকের উচ্চারণে মেয়ে থেকে মেয়েমানুষে সরণ শোনার যন্ত্রণা কোমাকোকে বিদ্ধ করেছে। আর বিদ্ধ করেছে ইয়োকোর প্রতি শিমামুরার অব্যক্ত ভালোবাসার ইঙ্গিৎগুলি। এ কারণেই সে হয়ত ইয়োকোর প্রতি রূঢ় হয়। উপন্যাসের একেবারে শেষে সিনেমা হলে আগুন লেগে ইয়োকোর দোতলা থেকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় পতনের পর সে ইয়োকোকে কোলে তুলে নেয়, তবে ইয়োকো তখন মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে।
কাওয়াবাতা এই অনন্য উপন্যাসে একটি জনপদ ও কয়েকটি চরিত্রকে তুলে আনার পাশাপাশি আমাদের কিছু মৌলিক জীবন দর্শনের দিকে নিয়ে যেতে চান। এই প্রসঙ্গেই বারবার আসে ‘ওয়াবি সাবি’র কথা। ‘ওয়াবি সাবি’ বলে অসম্পূর্ণতার মধ্যে থাকা সৌন্দর্যর কথা। ওয়াবি শব্দটির মধ্যে দিয়ে বোঝানো হয় সাধারণ, নিঃসঙ্গ, প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এমন এক জীবনের কথা, যেখানে বাহুল্য বা কৃত্রিমতা নেই। আর সাবি হল সময়ের সাথে ক্ষয়ে যাওয়া, পুরনো হয়ে যাওয়া বস্তুর মধ্যে নিহিত সৌন্দর্যকে অনুভব করা। জীর্ণ পাত্র, মরচে ধরা ধাতু বা শ্যাওলায় ঢাকা পাথর পশ্চিমী নন্দনতত্ত্বের বিচারে সুন্দর নয়, কারণ তা পূর্ণ নয়, চিরায়তের দ্যোতক নয়। কিন্তু ওয়াবি সাবির দৃষ্টিকোণ এই ক্ষয়িষ্ণু, অসম্পূর্ণতার মধ্যেও সৌন্দর্য আবিষ্কার করে। পশ্চিমের নন্দনতত্ত্ব নিখুঁত, চকচকে ও স্থায়িত্বকে অপরিসীম গুরুত্ব দেয়, বিপরীতে কাওয়াবাতা সহ অনেক জাপানী লেখকের লেখায় যে ওয়াবি-সাবি দর্শনের কথা আসে তা অসম্পূর্ণতা, প্রাকৃতিক ক্ষয় এবং স্বল্পস্থায়িত্বকে স্বাগত জানায়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ করতে হয় ‘মোনো নো আওয়ারে’ নামের এক দর্শনের কথাও। এই দর্শন ক্ষণস্থায়ীত্বের মধ্যে সৌন্দর্যকে অন্বেষণ করে। কোমিকোর ক্ষণস্থায়ী যৌবন ও সম্পর্কের নশ্বরতা এই উপন্যাসের অন্যতম বিষয়। এই অসম্পূর্ণতাকে কাওয়াবাতা ঋক্ততা হিসেবে দেখেন না, এর মধ্যেই সৌন্দর্যের ছবি খুঁজে পান। এই উপন্যাসের চরিত্রগুলি যে শারীরিক ও মানসিকভাবে একাকী, তাদের সম্পর্কগুলিও যে অসম্পূর্ণ এবং বিচ্ছিন্ন, তার পেছনে জেন দর্শনের শূন্যতার ধারণা রয়েছে। বৌদ্ধ বা জেন দর্শনের শূন্যতা কিন্তু পশ্চিমী শূন্যতা থেকে একেবারে আলাদা। পশ্চিমী শূন্যতায় যে ঋক্ততার ধারণাটি অভিব্যক্ত জেন বা বৌদ্ধ দর্শনের শূন্যতা তা থেকে একেবারে আলাদা। এই দর্শন নাগার্জুন ব্যাখ্যাত শূন্যতা, যা বলে কোনও বস্তু বা মুহূর্ত এক বিশেষ দৃষ্টিকোণে আসলে শূন্য কারণ অপর কোনও বস্তু বা পরিবেশই সব সময়ে তাকে নির্মাণ করছে, একক বিচ্ছিন্নতায় তার নিজস্ব স্বভাবগত অস্তিত্ব বা অর্থ নেই।
বিশিষ্ট জীবন দর্শনকে প্রকাশ করার জন্য উপযুক্ত এক রচনারীতিও তৈরি করেছেন কাওয়াবাতা। কাওয়াবাতার রচনাশৈলি প্রসঙ্গে বিশেষভাবেই বলা হয় ‘শিনকানকাকু হা’র কথা। ‘শিনকানকাকু হা’ শব্দবন্ধটি বিশ্লেষণ করে আমরা পাই -
新 (শিন) = নতুন
感覚 (কানকাকু) = অনুভূতি, ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যতা, সংবেদনশীলতা
派 (হা) = ঘরানা, আন্দোলন – এই তিওটি শব্দ।
শিন,কানকাকু, হা - এই তিনটি শব্দের সমাহারে তৈরি আন্দোলনটিকে আমরা বাংলায় বলতে পারি নতুন সংবেদনশীল সাহিত্য আন্দোলন।
বিশ শতকের বিশ ও তিরিশের দশকে জন্ম নেওয়া এই আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন কাওয়াবাতা স্বয়ং। অনুভব, ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বর্ণনা ও চেতনার অন্তর্গূঢ় স্তরের উন্মোচনের ওপর এই নতুন সাহিত্যসৃজন রীতিটি যে জোর দিতে চায়, তা এর নাম থেকেই পরিষ্কার। প্রথম সাড়া জাগানো গল্প ‘ইজু নর্তকী’ থেকেই এই ধারায় লেখা শুরু করেন কাওয়াবাতা আর ‘স্নো কান্ট্রি’ হল এই রীতিতে লেখা সাহিত্যকৃতিগুলির মধ্যে অন্যতম সেরা।
প্রসঙ্গত বলা দরকার আমরা যারা জাপানী ভাষা জানি না, কাওয়াবাতার লেখা পড়তে তাদের মূলত দারস্থ হতে হয় ইংরাজী অনুবাদের। অনুভূতিমালা সমৃদ্ধ এরকম একটি আখ্যান - যেখানে ঘটনা কম, পর্যবেক্ষণ, অনুভূতি আর নিবিড়তা বেশি - জাপানী ভাষা থেকে ইংরাজীর মতো সম্পূর্ণ অন্য ঘরানার ভাষায় নিয়ে আসা যে কতটা দুরূহ, তা বোঝা কঠিন নয়। অনুবাদক সেইডেনস্টিকার এই কাজে কতটা সফল হয়েছেন তা একইসঙ্গে জাপানী ও ইংরাজী ভাষায় অভিজ্ঞ, এমন কেউই বলতে পারবেন। তবে এডওয়ার্ড সেইডেনস্টিকারের করা 'স্নো কান্ট্রি' শীর্ষক অনুবাদটি পড়তে যে চমৎকার লাগে, এটা নির্দ্বিধায় বলা যায়৷ জাপানী সাহিত্য বিশেষজ্ঞ ডোনাল্ড কীন যখন এডওয়ার্ড সেইডেনস্টিকারের অনুবাদের সবিশেষ প্রশংসা করেন, তখন আমাদের ভরসা বাড়ে, প্রত্যয় জন্মায় এই অনুবাদ একই সঙ্গে নির্ভরযোগ্য ও নান্দনিক। প্রসঙ্গত বলা যাক ‘বিশ্বের শ্রেষ্ঠ গল্প ও উপন্যাস’ সিরিজের অংশ হিসেবে এই গ্রন্থমালার চতুর্থ খণ্ডে বাংলা ভাষাতে এই উপন্যাসের ইংরাজী থেকে যে অনুবাদের অনুবাদ শ্রীযুক্ত দেবনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় করেছেন, তার গায়ে কোথাও কোথাও খানিক আড়ষ্টতার ছাপ লেগে আছে। য়ুকিগুনিকে এই অনুবাদে বলা হয়েছে ‘বরফের দেশ’ কিন্তু জাপানী ভাষা সাহিত্যের বিশেষজ্ঞরা আমাদের জানিয়েছেন বরফ ও তুষার এক নয় এবং য়ুকিগুনির সঙ্গততর বঙ্গানুবাদ হবে ‘তুষারের দেশ’। কাওয়াবাতাকে বাংলা ভাষায় আনার প্রথম প্রচেষ্টা হিসেবে এই অনুবাদটির কিছু ঐতিহাসিক মূল্য রয়েছে ঠিকই, কিন্তু তাকে স্বীকার করেও বলা যায় মূল জাপানী ভাষা থেকে এর একটি নান্দনিকতর অনুবাদের জন্য বাঙালি পাঠক অপেক্ষা করে আছেন।